bdupdates.org

বাংলাদেশের সংকলিত সব আপডেট

আয়নাঘর গল্প – ৮

আমি একটা মাল্টিন্যাশেনাল কম্পানিতে জব করতাম। আমি এখনও শিওর না এখানে তাদের নাম নেয়াটা উচিত হবে কিনা। তবে যেখানে নেয়া দরকার, আমি তাদের নাম নিবো। তাদের একটা ব্রাঞ্চ থেকেই তো আমাকে উঠানো হয়। তাদের সিসিটিভি ফুটেজের ড্রাইভটাও নিয়ে আসে তারা।

আমার পরিবার যখন সেই কম্পানীর কাছে আমি যে তাদের ওখানে জব করতাম, এসবের ডিটেইলস চায়, তারা সেগুলো দিতে অস্বীকার করে। প্রথমে জিডি এবখ পরবর্তিতে মামলা কাজেও সেইসব ডকুমেন্টসের অভাবে অনেক কিছু করা যায় নি।

এত বড় কম্পানীর একজন ইমপ্লয়ীকে দিনে দুপুরে উধাও করা হল, তারা নিজেরাও কোন কেইস ফাইল করে নি। করে তো করেই নি, তারা আমার পরিবারকেও কোন ধরণের হেল্প করে নি। অথচ এই কম্পানির জন্য কি না করেছি। দ্বীন-দুনিয়া নষ্ট করেছি এদের জন্য কাজ করতে গিয়ে।

যাই হোক আমি আসর নামাযটা সেদিন আসরের পরে আমাকে কীডনাপ করে। যখন তারা আসে, আমি বুঝতে পারছিলাম না যে, এরা কোন এজেন্সী, আর একচুয়ালি কোন কারণে এসেছে। আমি বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম। পরে একটা নাম বলায় আমি একটু আঁচ করতে পারলাম, ঘটনা কি ঘটতে যাচ্ছে।

তারা সেখানের ইনচার্জকে জাস্ট বললো যে, আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিবে। আমি আসলে তখন অন্য কোন চিন্তা মাথায় আনি নি। কারণ এখানে আর কোন সিন ক্রিয়েট করে লাভ হবে না। আমাকে একজন সাথে করে নিয়ে তাদের গাড়িতে উঠালো। এর মধ্যে ১০ মিনিট পর তাদের বাকিরা আসলো, সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে। একেবারে ভেঙে ড্রাইভ নিয়ে আসছে। এই কাজ করার সময় গিয়ে অফিস বুঝতে পারলো যে, সামথিং সিরিয়াসলি ড়ং। কিন্তু ততক্ষণে তো তারা আমাকে দিয়েই দিয়েছে।

তারা এসে একটা খারাপ গালি দিয়ে বললো, এখনো এইটারে খোলা রাখসস! তখনই আমার হাত পিছনে হ্যান্ডকাফ, আর মাথায় জমটুপি পরিয়ে মাথার নীচের দিকে বাকা করিয়ে দেয়া হয়। এতক্ষণ আমি একটু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেও, জমটুপি পরানোর পর আমার প্যানিক শুরু হয়। আমি বুঝতে পারি সময় শেষ হয়ে আসছে। এবং তারা যা শোনাচ্ছিল, তেমনটা মনে হওয়াই খুব স্বাভাবিক।

তারা সাথে সাথে কিছু প্রশ্নও করছিলো, তুচ্ছাতাচ্ছিল্য করছিল। আমি খেয়াল রাখছিলাম গাড়ি কোন দিকে যাচ্ছে। বুঝতে পারলাম যে দক্ষিণ দিকে এই এই জায়গায়। মিন্টু রোডেই হবে। সন্ধ্যা মাগরিবের টাইম হয়ত শেষ তখন। আমাকে নিয়ে তারা নামলো। জমটুপি পরা অবস্থায় তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। সেদিন আমাকে কোন মারধোর করে নি। তবে যা শুনিয়েছিল, সেটা মারধোরের চেয়ে কম কিছু না।

অফিসারা তো প্রশ্ন করেছেই। কিন্তু সাথের চামচাগুলো বারবার বলছিল, সার এগুলা তো খারাপ, খাচ্চর। আগে যেডিরে আনসেন – একএকটার ফোন ভর্তি পর্ণ। আমাকে তখন জিজ্ঞেস করছিল, কিরে তোর ফোনে কি কি আছে। আমি রাগে দুঃখে বলছিলাম, আমার ফোন তো আপনাদের কাছে, খুলে দেখেন কি কি আছে।

একজন ভাইয়ের নাম নিয়ে বললো, ওই শালার তো ফোন ভর্তি বউয়ের ছবি। সেই ভাই নাকি অনেক অনুনয় বিনয় করেছিল, গ্যালারিতে না ঢুকতে। তারা খুব রসিয়ে রসিয়ে এসব আমাকে শোনাচ্ছিল। আমার তখন মনে হচ্ছিল মাটির সাথে মিশে যাই। তারপর আরো কতজনের নামে এতো এমন, ও তো অমন ভন্ড। কিন্তু তখন আমি এসব নিতে পারছিলাম না। আমার ব্রেইন কাজ করছিল না। গুম থাকা অবস্থায় একটা সময় আমি অনুধাবন করি যে, এটা একটা ট্রিক। কারো চরিত্রের ব্যাপারে বললে, তার প্রতি আমার একটা ক্ষোভ আসবে, আর আমি তার ব্যাপারে তাদেরকে হয়ত কোন তথ্য দিবো।

তাছাড়া এ যুগে ফোনে কে প্রেম করে, বা কে ডাউনলোড করে পর্ন দেখে। ওই বেকুবরা কিন্তু এসবই বলছিল। তারা সম্ভবত আমাদের বলদ মনে করে কিনা জানি না। তবে তাদের ট্রিক অনেকের ক্ষেত্রেই কাজ করে যায়। এই ট্রিক বিদেশী এজেন্সীগুলো কাজে লাগায়। র কাছে বলবে ও তোর নামে এইটা বলসে, ওর কাছে আবার এর নামে বলবে। বলবে আলেমরাই তো আলেমদের নামে তথ্য দেয়, বিচার দেয়। এভাবে নিজেদের মধ্যে বিদ্বেষ, অনাস্থা তৈরী করার চেষ্টা করে। আমি শুরু থেকেই তাদের বলছিলাম, কে কি করে এটা নিয়ে আমি কি করবো। আমার তাদের সাথে কোন লেনাদেনা নেই। তাদের ব্যক্তিগত ইস্যু।

এক মেয়ের কাছে আমি ট্যাবলেট বিক্রি করেছিলাম। তাকে জড়িয়ে কত কথা তাদের। যে এর সাথে কিসের চ্যাট এই সেই। আমাকে কত কথা শোনালো। এমনকি একদিন মাওলানা রফিক মাদানীর নামেও উল্টাপাল্টা কথা। শাইখ মামুনুল হক্বের কথা তো বাদই দিলাম। এগুলা নিয়ে তারা গসসিপ করে লিটারেলি। অথচ সাত মাস তাদের সাথে থেকে তো আমি তাদের চরিত্রও দেখে এসেছি।

সেদিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমাকে সাত তলায় নিয়ে যাওয়া হল। একটা ছোট্ট সেল, যেটা আমাদের বাসার ওয়াশরুমের সমান, সেখানে আমাকে ঢুকিয়ে হ্যান্ডকাফ, আর জমটুপি খুলে ফেলা হল। আমি দেখলাম যে, টয়লেট আছে সাথে। আমি তখন ওজু করে, সেখানকার গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম পশ্চিম কোন দিকে। একটু আড়াআড়ি করে দাড়াতে হত। আমি সব নামায আদায় করে নিলাম। ততক্ষণ তারা একটা বাটিতে খাবার দিয়ে গেছে। সেই ভয়ংকর দূর্গন্ধযুক্ত বাটি। আমি ছুঁয়েও দেখলাম না। তখন কি গলা দিয়ে খাবার নামে? আমি তো তখন মৃত্যুর প্রহর গুণছি।

লাইট সেদিন অফ করা ছিল। আমি দেখালাম চারপাশে দেয়াল। সামনে লোহার শিক পেরিয়ে একটা কোরিডর, তারপর দেয়াল, কোন থেকে একটু গার্ডরা যেখানে বসে সেটা বুঝা যায়। আমাকে বলা হল, গার্ডদের সার বলে ডাক দিলে তারা আসবে। সেই রাতটা ছিল আমার জন্য জীবনের সবচাইতে কষ্টের রাত। ঠান্ডায় পিঠ ফ্লোরে লাগাতে পারছিলাম না। সেদিন কি তাহাজ্জুদ পড়তে পেরেছিলাম কিনা, ফজরে কিভাবে উঠেছিলাম কিছুই মনে করতে পারছি না এখন। কোন ঘড়ি নেই, কিছু নেই, টাইম জিজ্ঞেস করলেও বলে না। আযানই একমাত্র সম্বল যা দিয়ে আমার সময় অনুমান করে নিতাম। তারা আমাকে একটা সুয়েটার আর ট্রাউসার দিয়ে যায়। সম্ভবত পরের দিন। আর গামছা!

__
Bearded Bengali

আয়নাঘর গল্প – ৮
Scroll to top