কোন এক গোয়েন্দা সংস্থায় প্রধানের কক্ষ । বিশাল রুম । সোফা, চেয়ার দিয়ে সুন্দর করে সাজানো । পাশেই ঘুমানের জন্য আলাদা রুম । নিয়ে এসে বসিয়ে দেয়া হলো রুমের ঠিক মাঝ খানে । প্রায় ভাংগা প্লাস্টিকের চেয়ারে। হাত পিঠমোরা করে হ্যান্ডকাপ লাগানো । প্রধানের আদেশে জম টুপি খুলে দেয়া হলো । গুমের তখন এক মাসের বেশী সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে । খাবারের অভাবে শরীরে শক্তি ছিল না। অল্পতেই প্রচন্ড ঠান্ডা লাগত । অন্ধকার আর আলো বাতাস ফ্যান ছাড়া থাকতে থাকতে এসিতে গেলেই কাপতে থাকতাম । আমাকে কাপতে দেখে কোন একজন এসির পাওয়ার বারিয়ে দিলো । এরপর আমার পরিচয় দেয়া হলো । পরিচয় পর্বের পর , সোজা অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো । তোরাই তো হেফাজত চালাস তাই না? সব আন্দোলনের মুল হোতাই তোরাই । শাতীম নিয়ে এত মাথা ব্যাথা কেন ? তোর জন্য তো তোর বাপের মাথা কাটা গেছে , বলে বাবা এমন কি বোন কে তুলেও গালি গালাজ করতে বাদ রাখেনি ।
তার নিচের অফিসার বলে উঠল স্যার এ যা করছে এরে তো নিন্মে তিনবার ক্রস ফায়ার দেয়া যায়। শুধু ওর বাপের কথা ভেবে এখনো দেই নাই । এই মাদা**** কোন দিন ভালো হবেনা । এরে মামলা দিয়ে কোন লাভ নাই ।
এরপর কেটে গিয়েছিল আরো অনেক মাস। কখনো ভাবি নি আবার সূর্য্যের আলো দেখব । প্রতিদিন চোখ খুলে যখন পায়ের নীচের বাথরুম টা দেখতাম , ভাবতাম আজ হয়ত শেষ দিন , আর দেখবো না এই বাথরুম। সেলের শিক গুলো , সেলের টাইলগুলো গুনতে গুনতে কখন যে ঘুমিয়ে যেতাম টের ও পেতাম না। সেলের সামনের সাদা দেয়াল আর লাইট টা এক সময় ঝাপসা লাগত । সেলের সামনে কখনো পিপিলিকার দল লাইন ধরে আলোর দিকে ছুটে চলত , আর ভাবতাম আমিও একদিন মিছিলে শামিল হবো। আবার ট্রাফিক , রিকশার টুংটাং শব্দ , ফেরিওয়াল চিৎকার চায়ের দোকানের আড্ডায় শামিল হবো । আলাহামদুলিল্লাহ আমার রব আমাকে সেই স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত করেন নি । তবে অনেকেই এখনো রয়ে গেছেন সেই অন্ধকার নিরব সেলে ।
__
[Topu Ahmed]