প্রথম কিছু দিন মার খাওয়ার পর, ভাবলাম আলহামদুলিল্লাহ অনেক মার খাইসি – গুনাহ তো ইনশা’ল্লাহ কিছু মাফ হবে। কারণ এত পাপাচার নিয়ে মরতেও ভয় লাগে। বুঝতেই পারতেসেন। আমি কিছুদিন আগেই আব্বু সাথে ঝগড়া করেছিলাম। মাফও চাই নি। ঝগড়া লেজিট ছিল, কিন্তু তবুও আমার আচরণ লেজিট ছিল না।
আমি ভাবতাম, এখন কি করার আছে! মারটার খেয়ে তাও ভাবতাম যদি এগুলোর কারণে মাফ পাই। কিন্তু যতদিন গেলো, বাকি বন্দীদের কথাও ধীরে ধীরে জানতে পারলাম। তখন আমার মনে হলো যে, আমি তো এর কিছুই খাই নি। নখটখ উঠিয়ে কয়েকজনের অবস্থা একাকার। তারা খেতে পারেন না হাত দিয়ে, পরিষ্কার হতে পারেন না। তবুও সেভাবেই আছেন।
আমি ভাবতে থাকি ইশশ! আমার জন্যও কি সমানে এরকম অপেক্ষা করছে? যখন তারা আমাকে নিতে আসতো, হ্যান্ডকাফ খোলার শব্দ, মুখে কালো জম টুপি যেন আমরা কিছুই দেখতে না পাই – এসব চিন্তা করলেই – আমি শুধু ওজু করে বসে থাকতাম। ওরা আসলেই নামায পড়া শুরু করতাম। ভাগ্যিস পার্সোনাল টয়লেট ছিল। র্যাবের বাচ্চারা তো সেটাও প্রোভাইড করতো না।
আমার ঘটনা পুরো বললে আপনারা বিশ্বাস করতে পারবেন না। কিন্তু আমি যাদের দেখে এসেছি, তাদের ঘটনা আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারি না।
ওখানে কথা বলাও খুব কঠিন। আমার চারপাশে শুধু দেয়াল আর দেয়াল ছিল। মাঝে মাঝে প্রহরীরা আসলে মানুষ রূপী কিছু জানায়োর দেখতে পেতাম। রাতে ঘুম কমই হতো। কিন্তু হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে মনে হতো কবরে আছি।
আমরা থাকতে থাকতে দেয়াল দিয়ে কথা বলার পদ্ধতি বানিয়ে নিয়েছিলাম। যখন প্রহরীরা একটু ঢিল দিতো, বা একটু নরম প্রহরী পড়তো, আমরা কথা বলতাম। সেই সময়টার জন্য আমরা সারাদিন অপেক্ষা করতাম। কখনো মিলতো, কখনো মিলতো না। আহা কত সুখ-দুঃখের কথা। মাঝে মাঝে মিস করি সময়টা!
__
Bearded Bengali